এ লজ্জা পুরো জাতির


এবার শিক্ষককে পিটিয়েছেন বদি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সুযোগ্য এমপি আবদুর রহমান বদি আবারও একজন শিক্ষককে পিটিয়েছেন। এর আগেও তিনি তিনজন শিক্ষককে পিটিয়েছিলেন। কিন্তু সে জন্য তাঁকে কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি। বিভিন্ন সময় পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, গত আড়াই বছরে এটা তাঁর ১১তম পেটানোর ঘটনা। এর আগে তাঁর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন কঙ্বাজারের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হাকিম, উখিয়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলামুর রহমান, কঙ্বাজার সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুর রহমান, টেকনাফের মুক্তিযোদ্ধা হাজি মোস্তফা, কঙ্বাজার আইনজীবী সমিতির সদস্য ও বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী অ্যাডভোকেট রাখাল মিত্র, বনবিট কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান প্রমুখ। প্রহৃত শিক্ষকরা হলেন_টেকনাফের আবদুল জলিল, পুলিন দে এবং সাবরাং হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুফিজউদ্দিন। এত ফৌজদারি অপরাধ করার পরও একজন ব্যক্তি কেবল ক্ষমতাসীন দলের এমপি হওয়ার কারণে পার পেয়ে যান কিভাবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এর পরও কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে, এ দেশে আইনের শাসন আছে!
বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দেশে শিক্ষার মানোন্নয়নে অনেক কথাই বলছেন। এই কি শিক্ষার মানোন্নয়ন? একজন শিক্ষককে যদি সামাজিকভাবে এতটুকু সম্মান আমরা দিতে না পারি, তাহলে দেশে শিক্ষার মানোন্নয়ন কি আদৌ সম্ভব? অভিযোগ রয়েছে, স্কুলগুলোতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে এমপি সাহেবদের কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। জানি না, শিক্ষামন্ত্রীর কানে এ ধরনের অভিযোগ পেঁৗছে কি না। কিন্তু কঙ্বাজারের টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর আলমকে কিল-ঘুষি-লাথি মারার খবরটি তিনি নিশ্চয়ই পড়ে থাকবেন। জানতে ইচ্ছা করে, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে একজন শিক্ষককে জনসমক্ষে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তিনি কোনোরূপ মর্মযাতনা অনুভব করছেন কি না? আওয়ামী লীগের উচিত ছিল অনেক আগেই এমপি বদির এসব অপকর্মের বিচার চাওয়া এবং তাঁকে আইনের মুখোমুখি করা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, স্কুল মাঠসংলগ্ন খাস জমিতে আওয়ামী লীগের একাংশের অফিসঘর বানানো নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। প্রধান শিক্ষক সেখানে ঘর নির্মাণের বিরোধিতা করেছিলেন। এতে প্রধান শিক্ষকের যদি কোনো অন্যায় হয়ে থাকে, তাহলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। এমপি বদির নিজ হাতে আইন তুলে নেওয়ার কী অধিকার ছিল? আর খাস জমিতে আওয়ামী লীগের অফিস বানানোর অধিকার কি রাষ্ট্র তাদের দিয়েছে? দেশে আইনের শাসন আছে_এ কথা বলতে বলতে যাঁরা মুখে ফেনা তুলে ফেলেন, তাঁরা এর জবাব দেবেন কি?
যত দূর জানা গেছে, শিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় থানায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। মামলা না হলে তো থানা কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছুই করতে পারে না। কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেললেও না। আহত শিক্ষক এখন কঙ্বাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর পক্ষে মামলা করাও সম্ভব নয়। এরপর প্রভাবশালী এমপি এতটাই প্রভাব বিস্তার করবেন যে সামান্য শিক্ষকের পক্ষে মামলা করাও সম্ভব হবে না। একটি বাদে সব ক্ষেত্রে তা-ই ঘটেছে। কিন্তু সমাজ কি অন্ধ হয়ে গেছে? সমাজ কি এর জবাব দেবে না?

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান